Monday, September 19, 2011

পাম চাষ : বহুমুখি লাভের কৃষি

পাম চাষ : বহুমুখি লাভের কৃষি



পাম তেল:
পাম গাছের ফল প্রক্রিয়াজাত করে যে তেল পাওয়া যায় তাকে পাম তেল বলে। পাম ফলের মাংশল ও বীজ হতে তেল পাওয়া যায়। মাংশল অংশ হতে যে তেল পাওয়া যায় তার নাম পাম তেল, আর বীজ (কার্নেল) হতে যে তেল পাওয়া যায় তার নাম পাম কার্নেল তেল। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের শতকারা ৮০ ভাগ পাম তেল উৎপাদন করে।

ইতিহাস:
পাম তেলের আদি উৎস পশ্চিম আফ্রিকা। পাম তেলের মিশরে আবির্ভাব ঘটেছে সম্ভবত: পশ্চিম আফ্রিকা থেকে। মালয়েশিয়ায় ১৯১০ সালে
Scotsman William Sime এবং Henry Darby নামের দুই ভদ্রলোক পাম চাষের প্রর্বতন করেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম দফা পাম বীজ মালয়েশিয়া থেকে আনা হয় এবং পলিথিন ব্যাগে ঢাকা বোটানিক্যাল গার্ডেনে চারা উৎপাদন করা হয়। ১৯৭৯ সালে মালয়েশিয়া ও নাইজেরিয়া থেকে আনা চারা দ্বারা প্রথম পাম চাষ শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে কক্সবাজার এবং সিলেট বনবিভাগকে ছয় মাস বয়সের চারা রোপণের জন্য সরবরাহ করা হয় । ১৯৮১ সালে কক্সবাজারে ৩২৫ একর, চট্টগ্রামে ২৭৯ একর এবং সিলেটে ১৮০ একর মিলে মোট ৭৮৪ একর পাম চাষের আওতায় আনা হয়।

পামচাষের গুরুত্ব:
বাংলাদেশের বর্তমান ভোজ্য তেলের চাহিদা প্রায় ১২ লক্ষ মেট্রিক টন। দেশের চাহিদার মাত্র শতকরা ১০ ভাগ তেল দেশে উৎপাদিত হয় বাকি শতকরা ৯০ ভাগ তেলের জন্য বিদেশের উপর নির্ভর করতে হয়। দেশে পাম ও সয়াবিন তেল আমদানি করে প্রতি বছর যে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করা হয় যদি পর্যাপ্ত পাম চাষ করা হয় তাহলে ১২,০০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় সম্ভব। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও প্রকৃতি পাম চাষের উপযোগী। মালয়েশিয়ায় উৎপাদিত পামের কাঁদি সাধারণত ৪০ কেজির বেশি হয় না। কিন্তু বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে উৎপাদিত কাঁদির ওজন ৬০ কেজি থেকে ৬৫ কেজি পর্যন্ত পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে উৎপাদিত পামের ফল তুলনামূলক আকারে বড় এবং দানা তুলনামূলক ছোট। পাম থেকে তেল উৎপাদনের মাত্রার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার চেয়ে এগিয়ে।

স্বাস্থ্য ও পুষ্টিমান:
সদ্য আহরিত পাম তেল বিটা ক্যারোটিনের সমৃদ্ধতম উৎস। পাম তেলে টোকোফেরল ও টোকোট্রায়েনল নামক দুই ধরনের ভিটামিন 'ই' অধিক পরিমাণে থাকে। অন্যান্য উদ্ভিজ্জ ভোজ্য তেলের মত পাম তেলও কোলেস্টেরলমুক্ত। কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল খাদ্যে পাম তেল ব্যবহার করলে রক্তে মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে না। পাম তেল খাদ্যে ব্যবহার করলে দেহে উপকারী 'এইচ.ডি.এল.' কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে এবং ক্ষতিকর 'এল.ডি.এল.' কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। পাম তেল রক্তের জমাট বাঁধার প্রবণতা হ্রাস করে ফলশ্রুতিতে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। লাল পাম তেলে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন 'ই' থাকে। যা গাজরের চেয়ে ১৫ গুন এবং টমেটোর চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি। লাল পাম তেল ক্যারোটিনয়েডের উৎস হওয়ায় কয়েক ধরনের ক্যান্সারকে কার্যকরভাবে প্রতিহত করতে পারে। পাম তেল এবং একই পরিমাণ ক্যালরিযুক্ত অন্য ভোজ্য তেল সম্বলিত খাদ্যের সাথে তুলনা করে দেখা গেছে যে পরীক্ষামূলকভাবে ঘটানো স্তন্য ক্যান্সারের সংঘটন ও বিকাশ উভয় ক্ষেত্রেই পাম তেল প্রতিরোধমূলক ভূমিকা পালন করে। যুক্তরাষ্ট্র্য ও যুক্তরাজ্যের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ভোজ্য তেলের মধ্যে ৫০ পি.পি.এম. পর্যন্ত কোলেস্টেরল থাকলে তা 'কোলেস্টেরল মুক্ত' তেল হিসেবে বিবেচিত হয়। পাম তেলের কোলেস্টেরল ৫০ পি.পি.এম. এর নিচে যা (১৩-১৯) পি.পি.এম. এর মধ্যে। অপরপক্ষে সয়াবিন তেলে (২০-৩৫) পি.পি.এম. সূর্যমুখী তেলে (০৮-৪৪) পি.পি.এম.এবং সরিষার তেলে (২৫-৮০) পি.পি.এম. কোলেস্টেরল বিদ্যমান। চীনে পাম তেল, সয়াবিন তেল, পিনাট তেল এবং শুকরের চর্বি (সবগুলোই সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত) নিয়ে এক তুলনামূলক গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে এদের মধ্যে পাম তেল দেহে উপকারী 'এইচ.ডি.এল.'কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং ক্ষতিকর 'এল.ডি.এল.' কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।

বিবিধ ব্যবহার:
পরিশোধিত পাম তেল গন্ধহীন হওয়ায় এর দ্বারা ভাজা খাদ্যেও স্বাভাবিক গন্ধ বজায় থাকে। পাম তেল অর্ধজমাট ঘনত্বে থাকার জন্যে এমন কিছু ভৌতগুণ ধারন করে যা অনেক খাদ্য প্রস্তুতিতে প্রয়োজন হয়। পাম তেল ভোজ্য তেল ছাড়াও বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়। সাবান, ডিটারজেন্ট, ফ্যাটি এসিড, ফ্যাটি এ্যলকোহল, গি্লসারল উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। বিস্কুট, কেক, আইসক্রীমসহ বিভিন্ন প্রকার খাবার তৈরিতে পাম তেলের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। চর্বি উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে পাম তেল সকলের পছন্দনীয়। পাম তেল থেকে তৈরি হয় সলিড ফ্যাট যেমন বনস্পতি যা স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম কারণ পাম তেলকে হাইড্রোজিনেশন করার প্রয়োজন হয় না বলে এতে ক্ষতিকর ট্রান্স ফ্যাটি এসিড থাকে না। পাম গাছের কাণ্ড, পাতা, ফলশূন্য কাঁদি ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকার দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করা যায়।

পাম গাছের পাতা ও ফলশূন্য কাঁদির আঁশকে প্রক্রিয়াজাত করে মধ্য ঘনত্বের ফাইবার বোর্ড ও চিপবোর্ড তৈরি করা যায়। পাম গাছের গুঁড়ি থেকে চমৎকার আসবাবপত্র করা যায়। পাম গাছের পাতা মাটিতে জৈব পদার্থ যোগ করে। এক টন পাম গাছের পাতা মাটিতে প্রায় ৭.৫ কেজি নাইট্রোজেন, ১.০৬ কেজি ফসফরাস, ৯.৮১ কেজি পটাশিয়াম ও ২.৭৯ কেজি ম্যাগনেশিয়াম যোগ করে ।

চাষাবাদ:
পাম গাছ চাষের জন্য মোটামুটি তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড থেকে ৩২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড হলে ভাল। বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাত ১৫০সেন্টিমিটারের বেশি তাই বাংলাদেশে পাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভবনা রয়েছে। প্রতিদিন ৫ ঘন্টা অথবা বার্ষিক মোট ২০০০ ঘন্টা সূর্যালোক দরকার। সমতল, ভারী, পানি ধারনক্ষম পলিমাটি পাম চাষের জন্য আদর্শ। বাংলাদেশের পাহাড়ী এলাকা, অনাবাদি জমি, সড়ক-মহাসড়কের পাড়, পুকুর পাড়, অব্যবহৃত স্থানে পাম গাছ রোপণ করা যেতে পারে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১২০টি থেকে ১৫০টি চারা অথবা ৯.৫ মিটার দূরে দূরে প্রতি হেক্টর জমিতে ১২৮টি চারা রোপণ করা যায়। বীজ হতে চারা তৈরি করতে এক বছর সময় লাগে। চারা রোপণের তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফল ধরে। রোপিত চারা ত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত ফল দিতে পারে। ৯.৫ মিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গর্ত করতে হবে। প্রতিটি গর্তের আকার ২×২×২ ঘন ফুট। প্রতিটি গর্ত জৈব সার দ্বারা ভরাট করতে হবে। জৈব সার শোধন করার জন্য একদিন (২৪ ঘন্টা) তামাক পাতা ভেজানো পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিটি গর্তে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০০ গ্রাম এমওপি সার প্রাথমিক মাত্রা হিসেবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে চারা রোপণের আগে অবশ্যই গতের্র জৈব সার বা কম্পোস্ট ভালভাবে ওলট-পালট করে গ্যাস বের করে দিতে হবে যাতে চারা গাছের কোন ক্ষতি না হয়। চারা রোপণের পর সবসময় মাটিতে যাতে পানি থাকে সেজন্য সেচ দিতে হবে।

ইঁদুরের আক্রমণ রোধ করার জন্য শতকরা ২ ভাগ জিংক ফসফাইট বিষটোপ ব্যবহার করে যেতে পারে। গন্ডার পোকার আক্রমণে গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়। গোঁড়া পচা রোগ যা
Ganoderma boninense নামক জীবাণুর আক্রমণে ঘটে। এ রোগের কারণে শতকরা ৫০ভাগ পর্যন্ত ফলন কমে যেতে পারে। আইপিএম পদ্ধতিতে পোকাদমন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আক্রমণ রোধ করা যেতে পারে। ব্যাগওয়ার্ম ও ক্যাটারপিলারের আক্রমণ রোধ করার জন্য জৈব বালাইনাশক যেমন ব্যাকটেরিয়া Bacillus Thuringensis ব্যবহার করে যেতে পারে।

ফল সংগ্রহ:
সারা বছরই পাম গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। ফিলিপাইনের আরবিএপি (জইঅচ) এর একটি প্রকাশনা অনুযায়ী চারা রোপণের ২৬ মাস থেকে ৩০ মাসের মধ্যেই ফসল সংগ্রহের পর্যায়ে পৌছায়। এক হেক্টর জমির পূর্ণবয়স্ক গাছে গড়ে বছরে কাঁদিসহ ফল ১৯.১ মে.টন পাওয়া যায়। মাসে তিন বার বা ১০ দিন পর পর ফল সংগ্রহ করা ভাল।

তেল প্রস্তুত:
পরিপক্ক ফলগাছ থেকে কাঁদিসহ কেটে নামিয়ে পরিস্কার করতে হবে। তারপর ফলগুলোকে পাত্রের মধ্যে পানিসহ ফুটাতে হবে এতে ফলগুলো নরম হয়। এবার নরম ফলগুলোকে হাতে চেপে রস বের করতে হবে। তারপর পানি মিশ্রিত এ রসকে একটি পাত্রে রেখে চুলায় কিছুক্ষণ তাপ দিলে রসে বিদ্যমান পানি বাষ্পাকারে বের হয়ে যাবে এবং পাত্রের মধ্যে পাম তেল জমা থাকবে। এ ভাবে প্রাপ্ত তেল ছেঁকে বোতলে সংগ্রহ করে রাখলে ছয় মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।

বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোটা, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনা এবং সর্বোপরি ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিজ নিজ আঙ্গিনা ও অব্যবহৃত স্থানে পাম গাছের রোপণের বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে পাম তেল একদিন হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের চাবিকাঠি।

সংকলনে: মুহম্মদ আরশেদ আলী চৌধুরী, মেহেরপুর

পাম বা অয়েল পাম চাষ


নানা সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। বিশেষত কৃষিতে এ সম্ভাবনা আরও বেশি। এমনি একটি নতুন সম্ভাবনার নাম অয়েল পাম চাষ। খাদ্য শস্যের নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি বর্তমানে ভোজ্যতেলের নিরাপত্তাহীনতা দেশের অন্যতম সমস্যা। প্রতি বছর ভোজ্যতেল আমদানি বাবদ আমাদের বর্তমান প্রায় ১৩০ কোটি ইউএস ডলার ব্যয় হয়। অয়েল পাম চাষ করে আমরা সহজেই ভোজ্যতেল আমদানি বাবদ টাকার একটি উল্লেখযোগ্য অংক সাশ্রয় করতে পারি।
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান ও জলবায়ু অয়েল পাম চাষের জন্য অত্যন- উপযোগী। এ দেশের রাঙ্গামাটি, দুদুকছড়ি (খাগড়াছড়ি), কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ এবং চুয়াডাঙ্গার দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলায় অয়েল পাম সন্দেহাতীতভাবে চাষ করা সম্ভব।
দিনাজপুরের হাজী দানেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১টি, ঘাটাইলের রামজীবনপুরে ২টি এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৩টি গাছের সবকটিতে ফল আছে।
সুনিষ্কাশিত প্রায় সবধরনের মাটিতে অয়েল পাম চাষ সম্ভব। বাংলাদেশের কঙ্বাজার, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিলেট, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, পার্বত্য এলাকাসহ ৩০টি কৃষি জলবায়ু অঞ্চলের মধ্যে ২৭টি কৃষি জলবায়ু অঞ্চলেই অয়েল পাম চাষ সম্ভব। উঁচু ও মধ্যম এবং বন্যার পানি আসে কিন্তু বেশিদিন থাকে না এমন জমিতেও অয়েল পাম চাষ করতে হয়।
পৃথিবীতে জমি ব্যবহারের দক্ষতা এবং উৎপাদন ক্ষমতার দিক দিয়ে সব ধরনের তৈল জাতীয় শস্যের (সয়াবিন, সরিষা, তিল, তিষি, সূর্যমুখী ইত্যাদির) মধ্যে অয়েল পামে চারগুণ বেশি তেল বিদ্যমান। বাংলাদেশের অয়েল পামে শতকরা ৬০ ভাগ পাম অয়েল আছে। অয়েল পাম একটি এনার্জি এফিসিয়েন্ট ফসল। চাষ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে সার, বালাইনাশক, ফসল জ্বালানির ব্যবহার তুলনামূলক কম হয়। প্রতিহেক্টর জমিতে ৪ টন পাম অয়েল বছরে উৎপাদিত হয় কিন্তু বর্তমানে মালেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতে হেক্টরপ্রতি ৭ টন পাম অয়েল উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্নজাত উদ্ভাবিত হয়েছে।
একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় প্রকাশ, অন্যান্য কৃষি ফসল চাষ করে যেখানে হেক্টরপ্রতি ১২১০ ইউরো আয় হয়, সেখানে অয়েল পাম চাষ করে ১৬১৭ ইউরো আয় করা সম্ভব অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রতিহেক্টরে অয়েল পাম চাষ করে বছরে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার বেশি আয় করা সম্ভব।
অয়েল পাম যেহেতু একটি পাম জাতীয় গাছ তাই অন্য ফসলের সঙ্গে জায়গা, বাতাস, খাদ্য উপাদান সূর্যালোক ইত্যাদির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে না। উঁচু জমির আইল, শিক্ষাদানের পতিত জমি, ক্যান্টনমেন্ট, রাস্তার দুপাশ, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পতিত জমি, পাহাড়ি অঞ্চলের পাদভূমির বিশাল এলাকা এ চাষের আওতায় আনা সম্ভব।
উপকূলীয় বিশাল এলাকা অয়েল পাম চাষের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা যায়।
মালেশিয়া ১৯৬০ সালের পর
Land Setlement Scheme এর আওতায় অয়েল পাম চাষ ব্যাপকভাবে শুরু করে। দারিদ্র বিমোচন সফল হয়েছে এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাম অয়েল উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের সবার ভোজ্যতেলের বিকল্প হিসেবে অয়েল পাম বাণিজ্যিকভিত্তিতে এবং প্রতি বাড়িতে ২/১টি করে চাষ করা উচিত। অয়েল পাম সারাবছরই ফল দেয় বিধায় এর উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে জড়িত শ্রমিকদের সারা বছরই কর্মে জড়িত থাকার সুযোগ থাকে।
অয়েল পাম গাছ রোপণের তৃতীয় বছর থেকে ২৫ বছর পর্যন- লাভজনক ফলন দেয়। যেকোন দেশের দারিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য একটি আয়বর্ধক ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের অয়েল পাম চাষকে দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম একটি উৎস হিসেবে বিবেচনা করে কাজে লাগানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সরকারি খাস জমিতে অয়েল পাম চারা রোপণের মাধ্যমে বিডিআর এর সহায়তায় বিশেষ আয়বর্ধক সামাজিক কর্মসূচি হাতে নেয়া যেতে পারে বলে আমি মনে করি।

একটি পরিবারের জন্য দুটি পামঅয়েল গাছই যথেষ্ট

বিশ্বে তেল উৎপাদনে পামঅয়েল গাছ অনেক এগিয়ে রয়েছে। এই গাছ যদি আমাদের দেশে পাহাড়ি পতিত ভূমিতে এবং সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে সারাদেশে লাগানো যায় তবে ৫-৭ বছরের মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠিতে পরিণত করা সম্ভব।
পামঅয়েল গাছ একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। রোপণের ৩-৪ বছরের মধ্যেই ফলন দিতে শুরু করে। ফলন শুরুর পর থেকে প্রতিমাসে একটি করে কাঁদি দেয় এবং সেই কাঁদি থেকে তেল সংগ্রহ করা যায়। এই গাছ একটানা ২৫-৩০ বছর পর্যন- ফলন দেয়। অন্য যেকোন ভোজ্য তেলের ফসল থেকে পাওয়া তেল অপেক্ষা এই তেল ১৫ গুণ বেশি হয়ে থাকে। ফুলটির মাংসল অংশকে বলা হয় মেসোকার্প যা থেকে পাম তেল আহরণ করা হয় আর বীজ বা শাঁশ থেকে পাওয়া যায় পাম কর্ণেল তেল। প্রতিটি পাম ফল থেকে ৯ ভাগ পাম তেল ও ১ভাগ পাম কর্নেল তেল পাওয়া যায়।
আমাদের দেশিয় পদ্ধতিতে সহজেই পাম তেল সংগ্রহ করা যায়। যেমন_ একটু পানিতে পাকা পাম ফল সিদ্ধ করে হাত দিয়ে চিপা দিলে তেল বের হয়ে আসবে। যদিও এই তেলে থাকবে পানির মিশ্রণ। মিশ্রণটি চুলায় জ্বাল দিলে পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে এবং তেলটুকু থেকে যাবে।
বাংলাদেশের মাটি উর্বর। হেলায় ফেলায় চাষ করলেই অনেক ফসল জন্মে। তাইতো দেশে মাটিকে সোনার সাথে তুলনা করেছেন কবি। আমাদের দেশের এই মাটিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়- বেলে মাটি, এঁটেল মাটি ও পলি মাটি। বেলে মাটি আবার দুই প্রকার- বেলে চর ও বেলে দো-আঁশ। পাম গাছ চাষ করার জন্য তিন প্রকার মাটি-ই উপযোগী। পাম গাছ চাষের জন্য মাটিতে পিএইচ -এর ৪-৭ প্রয়োজন (পিএইচ বলতে মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারত্বর পরিমাণকে বুঝায়)। বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকার পিএইচ-এর মাত্রা ঠিক থাকায় পামঅয়েল গাছ চাষ সম্ভব।
পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে পামঅয়েল গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পামঅয়েল গাছ চাষে সামান্য পরিমাণে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয়। পাম ফল থেকে পাম তেল সংগ্রহের সময় যে পুষ্টিসমৃদ্ধ বর্জ্য পাওয়া যায় সেটাই সার হিসেবে পাম গাছে ও গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস করার জন্য পামঅয়েল উদ্ভিদের রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের করার জন্য জৈব পদ্ধতিই ব্যবহার করাই ভাল।
বিশ্বে এখন পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার জন্য "শূন্য বর্জ্য ও শূন্য দহন" পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এই গাছের পাতা, গুঁড়ির শূন্য কাঁদি ব্যবহার করে নতুন নতুন দ্রব্য উৎপাদন করা হচ্ছে। পাতা ও ডাল না পুড়িয়ে সার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাম গাছের এক টন পাতা মাটিতে ৭.৫ কেজি নাইট্রোজেন, ১.০৬ কেজি ফসফরাস, ৯.৮১ কোটি পটাসিয়াম ও ২.৭৯ কেজি ম্যাগনেসিয়াম ফিরিয়ে দেয় এবং এই গাছ বাতাস থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে।
সারা বাংলাদেশে পামঅয়েল চাষ ছড়িয়ে দিতে সরকারকে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে চাষাবাদ বাস-বায়িত করতে হবে। গণমাধ্যমকে প্রচারের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সবাইকে পামওয়েল গাছ চাষ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে পাম চাষের প্রসার ঘটাতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এবং পাবর্ত্য এলাকার উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন যে সব রস্তা আছে সে রাস্তার দুপাশে পামঅয়েল গাছ লাগানো যেতে পারে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মন্দির ও হাসপাতালের অব্যবহৃত জায়গায়ও পাম চাষ করা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে অনাবাদি পতিত জমি, পাহাড়ি অঞ্চল, চরাঞ্চল ও উপকূল অঞ্চলে বৃক্ষরোপণ অভিযানের মাধ্যমেও পামঅয়েল চাষ করা যায়।
একটি পরিবারে দুইটি পামঅয়েল গাছ চাষ করলে ওই পরিবারের সারা বছরের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ হবে। প্রতিটি পরিবার যদি অয়েলপাম চাষে এগিয়ে আসে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের তেল আমদানি করতে হবে না।
বাংলাদেশ বছরে সাত লক্ষ টন পাম তেল আমদানি করে থাকে। যার মূল্য ১২ হাজার কোটি টাকা। আমরা যদি পামঅয়েল গাছ চাষের মাধ্যমে দেশে পাম তেলের উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি, তাহলে দেশের ১২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব। এছাড়া অধিক উৎপাদনে আমরা বিদেশে রফতানি করে আয়ও করতে পারি বৈদেশিক মুদ্রা।

লেখক: মনজুর হোসেন,এগ্রিকালচার ফার্ম, কুমিল্লা
তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

Sunday, September 18, 2011

ঠাকুরগাঁওয়ের দিগন্তজুড়ে পামবাগান

ঠাকুরগাঁওয়ের দিগন্তজুড়ে পামবাগান
আবদুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও


বিশ্বের ভোজ্যতেলের বেশির ভাগ জায়গা ধরে আছে পাম তেল। বাংলাদেশকে এ তেল আমদানি করতে হয়। আর এ তেল হয় পাম গাছের ফল থেকে। আশার কথা এ পাম গাছ এখন বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। এক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গের জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলার আনাচে কানাচে ভরে যাচ্ছে পাম গাছে। লাগানো হয়েছে ৩৫ হাজার পাম চারা। ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অন্তত ৬০টি পামবাগান। তবে এ কাজে সরকার না যতটা এগিয়ে এসেছে তার চেয়ে বেশি এগিয়ে এসেছে কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে গ্রিন বাংলা, স্বনির্ভর শ্যামল বাংলা, বখতিয়ার এগ্রো প্রজেক্ট কোম্পানি অন্যতম।
সদর উপজেলার ইসলামবাগ গ্রামের আলী আকবরসহ বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা বাগান করেছেন। আলী আকবরের বাগানে লাগানো হয়েছে ৮৮০টি চারা। এ ছাড়াও রুহিয়ার বিপ্লব ১৩০, ভাতগাঁওয়ের ফুলেন বর্মণ ৫০০, ইসলামনগরের আশরাফ আলী ৩৮৬, হরিনারায়ণপুরের রবীন্দ্রনাথ দত্ত ৩০২, মোলানী গ্রামের মমিনুল ইসলাম ২০০, রহিমানপুরের জয়নাল আবেদিন ১৪৫, বালিয়াডাঙ্গীর এহসানউল্লাহ ২০০ ও কচুবাড়ীর হিরু জাফর ২০০ গাছের চারা দিয়ে বাগান সাজিয়েছেন। ভাতগাঁও গ্রামের পাম চাষি ফুলেন চন্দ্র জানান, তিনি লিচুর বাগান করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। কিন্তু লিচুর চেয়ে পাম গাছ থেকে বেশি লাভবান হওয়া যায় বলে তিনি এ বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি জানান, গাছে ফল আসা শুরু করলে বছরে প্রতি বিঘা জমি থেকে অন্তত পাঁচ-সাত লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি, প্রকৃতি ও আবহাওয়া পাম চাষের জন্য উপযুক্ত। জেলার মাটি বেলে-দোআঁশ। গড় বৃষ্টিপাত এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ১০০ মিলিমিটার। আর্দ্রতা ৭০-৮০ ভাগ। সূর্যালোক আট-নয় ঘণ্টা। পাম চাষের ক্ষেত্রে এসব শর্ত ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার চেয়ে ভালো। কেননা পাম চাষে এ দুটি দেশ এগিয়ে আছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মতে, পাম চারা লাগানোর আগে জমিতে দুই ফুট বাই দুই ফুট পরিমাপের গর্ত করতে হয়। গর্তে ১০-১৫ কেজি পচা গোবর সারের সঙ্গে কিছু রাসায়নিক সার ব্যবহার করে গর্তের মাটি ভরাতে হয়। বাগানের ২০ ফুট পর পর চারা সারি করে লাগাতে হবে। তবে চারা বর্ষাকালে লাগানোই ভালো। পাম গাছ লাগানোর পাঁচ বছরের মধ্যে গাছে ফল ধরে এবং সারা বছর ফল পাওয়া যায়। একটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ৩০০-৪৫০ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। উৎপাদিত ফল থেকে ৫০-৭৫ লিটার পর্যন্ত পাম তেল উৎপাদন করা সম্ভব। বখতিয়ার এগ্রো প্রজেক্টের অপর এক কর্মকর্তা জানান, চারা সরবরাহের পাশাপাশি পাম ফলের নায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ফল সংগ্রহ ও ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় জেলার সুবিধাজনক স্থানে ওয়েল প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বেলায়েত হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে বেসরকারি উদ্যোগে বেশকিছু পামবাগান গড়ে উঠেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো গাছ উৎপাদনে যায়নি। তবে এ জেলার মাটি, আবহাওয়া ও প্রকৃতি বিবেচনায় এখানে পাম চাষ লাভজনক বলে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জেলা প্রশাসক মুহা. শহিদুজ্জামান জানান, পাম ওয়েল বিক্রি করে ৩০ বছরে দরিদ্র অবস্থা থেকে মালয়েশিয়া উন্নতশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সেই দিক বিবেচনায় ঠাকুরগাঁও জেলাও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলেছে।
Source: http://www.bd-pratidin.com, 18th Sep. 2011

Friday, May 20, 2011

সিলেটে ডা. জামালের নার্সারি বিপ্লব: সবুজ বৃক্ষের তরল স্বর্ণ

সিলেটে ডা. জামালের নার্সারি বিপ্লব: সবুজ বৃক্ষের তরল স্বর্ণ


নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় পাম গাছের নার্সারি করে এলাকায় বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছেন দক্ষিণ সুরমার ডা. জামাল আহমেদ। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি রোপণ করছেন বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা। উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের তুড়ুকখলা গ্রামের জামাল আহমেদ হোমিও চিকিৎসক। এ অঞ্চলে তিনি জামাল ডাক্তার নামে বেশ পরিচিত। ২০০৮ সালে মালয়েশিয়া থেকে পাম গাছের বেশ কিছু বীজ সংগ্রহ করে তিনি বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করেন। রোপণকৃত বীজ থেকে চারা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে।
পরবর্তীতে তিনি আবার মালয়েশিয়া থেকে ১ লক্ষাধিক পাম গাছের বীজ সংগ্রহ করেন। এ বীজ বাড়ির আঙ্গিনা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী একটি নিজস্ব জমিতে রোপণ করেন। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে তার সবুজ বৃক্ষের বিস্ময়কর বিপ্লবের কথা। চারা নিতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসেন। অনেকে দেখতে আসেন সবুজ বৃক্ষের তরল স্বর্ণ নামক নার্সারিটিকে। রোপণকৃত চারা বিক্রির সুবিধাকল্পে তিনি দাউদপুর চৌধুরী বাজারে এনসিসি ব্যাংক লালদিঘী শাখার অর্থায়নে জালালাবাদ এগ্রো কমপ্লেক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সেখানে পাম গাছের চারা রেখে বিক্রয় করছেন। জালালাবাদ এগ্রো কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, ছোট বড় প্রায় দেড় লাখ পাম গাছের চারা রয়েছে। প্রতিটি চারা প্রাথমিকভাবে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বীজ সংগ্রহ, চারা রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রায় ১ কোটি টাকা তিনি বিনিয়োগ করেন। কাঁদি ধরা চারা তিনি ৩ বছর পূর্বে লাগিয়ে ছিলেন। জনসাধারণকে পাম গাছ রোপণের জন্য উৎসাহিত করতে প্রতি সপ্তাহে ২ দিন তার প্রতিষ্ঠানে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের যৌথ সচিত্র সিডি প্রদর্শন করেন। সিডি ফুটেজ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতি গাছে বছরে ১০/১২টি কাঁধি ধরে। প্রতি কাঁদির ওজন মালয়েশিয়াতে ২০-৪০ কেজি হলেও বাংলাদেশে ৪০-৬৫ কেজি পর্যন্ত হচ্ছে। পাম গাছ রোপণের ৩/৪ বছর পর থেকে প্রতি কাদি থেকে কমপক্ষে ৫০ লিটার পাম অয়েল পাওয়া যেতে পারে, যার বাজার মূল্য ৩ হাজার টাকা। বাড়ির আশপাশে ও পতিত জমিতে ১০০টি গাছ রোপণ করলে বছরে ৩ লাখ টাকা আয় হবে। এরই মধ্যে ডা. জামাল দেশের বিভিন্ন স্থানে পাম গাছ রোপণ করে নিজে লাভবান হোন ও দেশকে সমৃদ্ধিশালী করুন নামক সেমিনারে আয়োজন করেন। এ সেমিনার দেশের কৃষিবিদদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তার নার্সারিতে শুধু পাম গাছের চারাই নয়, অন্যান্য আরও অনেক ফলদ, বনজ এবং ঔষধি গাছের চারা রয়েছে। যা থেকে প্রাপ্ত মাসিক আয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা হতে পারে। সুরমা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ডা. জামালের এ উদ্যোগ নিশ্চয় প্রশংসার দাবিদার। এতে তিনি শুধু আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন না, দেশকেও সমৃদ্ধিশালী করতে কাজ করছেন।
শফিক আহমদ

Source: Bangladesh Pratidin, 18th May-2011

Thursday, May 19, 2011

বান্দরবানে ৩ একর জমির পাম গাছে ফল

বান্দরবানে ৩ একর জমির পাম গাছে ফল

বান্দরবান পার্বত্য জেলায় পাম ওয়েল চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে রাজভিলা ইউনিয়নের বাগমারা এলাকায় কাজল মাস্টারের পাম ওয়েল বাগানে ফুল ও ফল আসতে শুরু করেছে।

তার বাগানে ২ বছর ৩ মাস বয়সী ৪শ’টি পাম গাছের মধ্যে ২৫০টিতেই ফুল ও ফল আসায় এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে সম্ভাবনাময় পাম চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। মঙ্গলবার সকালে বাগমারায় কাজল মাস্টারের বিশাল পাম চাষ বাগান পরিদর্শনকালে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাগামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং আদর্শ ফলদ-বনজ ও পাম চাষী কাজল কান্তি দাশ জানিয়েছেন, তিনি ২ বছর ৩ মাস আগে বিশেষ ব্যবস্থায় সংগ্রহ করে প্রায় ৩ একর ভূমিতে ৪শ’টি পাম ওয়েল গাছের চারা রোপণ করেন। বান্দরবান সেনা রিজিয়নের সহায়তায় ওইসব পাম চারা সংগ্রহ করার পর পরীক্ষামূলকভাবে পাম চারাগুলো রোপণ করা হয় জমিতে। নিয়মিত পরিচর্যার কারণে একটি চারাও মারা যায়নি,সবগুলো সবল হয়েই ক্রমবিকাশ ঘটছে।তিনি বলেন, চারা লাগানোর মাত্র ১বছর ৩ মাস সময়ের মধ্যেই গত বছর প্রায় ২০টি গাছে ফুল আসে, তবে ফল তেমন ধরেনি। চলতি মৌসুমে ৪শ’টি পাম গাছের মধ্যে প্রায় ২৫০টি গাছে ফুল ও ফল ধরেছে। ঢাকা ও টাংগাইল পাম ওয়েল কোম্পানী থেকে মাঠ কর্মকর্তাদের এ বাগান পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে।

পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের ৭টি উপজেলায় বিক্ষিপ্তভাবেই পাম্প ওয়েল চাষ শুরু হয়েছে সাম্প্রতিক সময় থেকে। ফলদ ও বনজ বাগানে সাথী গাছ হিসেবেই মূলত চাষীরা এ পাম গাছের চারা লাগাচ্ছেন। তবে পাম চারার কোন নার্সারী না থাকায় জেলার বাইর থেকেই পাম চারা সংগ্রহ করতে হচ্ছে আগ্রহী চাষীদের। প্রতিটি পাম ওয়েল চারা গড়ে ৬শ’ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

বাগমারায় কাজল মাস্টারের বাগানেই সবচেয়ে বেশি পাম গাছ লাগানো হয়েছে। এ পাম বাগান জেলায় একটি মডেল বাগান হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছে। জেলায় স্থানীয়ভাবে পাম চাষের ব্যাপারে পরামর্শ বা দিক-নির্দেশনা প্রদানের কোন কর্তৃপক্ষ না থাকা সত্বেও পাম চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজল মাস্টার বিশাল পাম বাগান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।

পাহাড়ের গ্রামে গ্রামেই সম্প্রসারিত হচ্ছে এ পাম চাষ। ১০-২০টি করে পাম চারা রোপণ করেছেন অনেকেই তাদের ফলদ বাগানে। আগামী ৫ বছরের মধ্যেই পুরোদমে পাম গাছে পাম উৎপন্ন হবে। এতে প্রতিটি পাম গাছে প্রতিমৌসুমে গড়ে ৫২ কেজি পর্যন্ত পাম ফল এবং কাঁচা পাম তেল সংগ্রহ করা সম্ভব বলেও কাজল মাস্টার জানান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক উদয়শংকর মুৎসুদ্দী জানান, জেলার মাটি এবং আবহাওয়া পাম চাষের জন্য অনুকূল ও খুবই উপযোগী। চাষীরা সহজ ও কমমূল্যে পাম চারা পেলে অর্থকরী এ পাম চাষ দ্রুত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। বেসরকারি তথ্যানুযায়ী জেলায় বর্তমানে শতাধিক একরের জমিতে পাম চাষ হচ্ছে বলে জানা গেছে।
Source: www.dainikazadi.org, 21th May-2011

পাম গাছ চাষের মাধ্যমে সম্ভব সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার তেল রফতানি।

অপ্রচলিত কিন্তু সম্ভাবনাময় কৃষি উৎপাদনে বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনৈতিক চিত্র:
পাম গাছ চাষের মাধ্যমে সম্ভব সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার তেল রফতানি।

সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
‘দৈনিক আল ইহসান’ ডেস্ক সূত্রে জানা গেছে, ‘পাঁচবিবি পৌরসভার প্রতিটি বাড়িতে পাম গাছের দুটি করে চারা বিতরণ করে পাঁচবিবিকে পাম গাছের পৌরসভা বানানোর মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন হাবিবুর রহমান হাবিব। এ উপলক্ষে জনাব হাবিব নিজ উদ্যোগে পৌরসভার ৬ হাজার পরিবারের মধ্যে সাড়ে ১২ হাজার পাম চারা বিতরণ করেন। চারার পাশাপাশি চারা রোপণ ও তেল আহরণ পদ্ধতি সংবলিত একটি করে লিফলেটও বিতরণ করেছেন। চারাগুলো সঠিকভাবে রোপণ ও পরিচর্যা হচ্ছে কি না তা তদারক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণও করা হয়েছে। কোন উদ্দেশ্যে তিনি এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ভাবছি ৪/৫ বছর পরের কথা। ৪/৫ বছর পর থেকে পাঁচবিবি পৌরসভার মানুষ আর ভোজ্য তেল কিনবে না। বরং অতিরিক্ত তেল অনেকেই বিক্রি করতে পারবে। তিনি মালয়েশিয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, মালয়েশিয়া একসময় আমাদের মতোই দরিদ্র দেশ ছিল। আজ তারা পামঅয়েলের সবুজ বিপ্লব ঘটিয়ে ধনী দেশে পরিণত হয়েছে।”
বলাবাহুল্য, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌরসভার হাবিবের কথা আক্ষরিক অর্থেই সত্য।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে বিশেষ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কৃষিখাতে নজর দিতে হবে।
কারণ কৃষিখাতে রয়েছে অনেক অনাবিষ্কৃত সোনালী সম্ভাবনা।
প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী আমাদের দেশে দৈনিক গড়ে ৬ হাজার মেট্রিকটন এবং বছরে ২১ লক্ষ ৯০ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। যার সিংহভাগই আমাদের আমদানি করতে হয়। এর আনুমানিক মূল্য হচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে পামগাছ চাষে সার্বিকভাবে বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র।
দেশের ২২ লাখ টন ভোজ্যতেলের বর্তমান চাহিদা মেটাতে মাত্র তিন কোটি পাম গাছের উৎপাদন প্রয়োজন। কিন্তু যদি পরিবার প্রতি ৫টি করে পাম গাছ রোপণ করে তাহলে প্রতি বছর আমাদের চাহিদা পূরণ করে ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের পাম তেল রফতানি করা সম্ভব।
একজন কৃষক এক বিঘা জমিতে সাধারণ ফসল থেকে সকল খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করে সেখানে একই পরিমাণ জমিতে পাম চাষ করে বছরে কমপক্ষে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার থেকে ৩ লক্ষ কিংবা তারও অধিক আয় করা সম্ভব।
পরিবেশগত দিক দিয়ে পাম অত্যন্ত পরিবেশ বান্ধব একটি উদ্ভিদ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এটি বাতাসের গতি রোধ করে বাতাসের ক্ষিপ্রতা কমিয়ে দেয়, ফলে লোকালয়ে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়। পাম গাছ দীর্ঘজীবী এবং শক্তিশালী গাছ হওয়ায় ঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষ ও সম্পদ রক্ষা করতে উপযোগী। যা আমাদের উপকূলীয় এলাকার মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ৩৮ বছর ধরে বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এখানের মাটি ও আবহাওয়া অয়েল পাম চাষের উপযোগী। কোন কোন স্থানে মালয়েশিয়ার চেয়েও পামের ভালো ফলন আশা করা যায়।
বাংলাদেশে প্রথম সিলেটের হবিগঞ্জের সাতছড়িতেস্থানে ১৯৭৬-৭৮ সালে কিছু পাম গাছ রোপণ করা হয়। পরে ১৯৭৯ সাল থেকে পাম চাষ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে বান্দরবান, রংপুর, বগুড়া, ঘাটাইল, সিলেট, খাগড়াছড়ি, যশোর, ঢাকা, সাভার ও কুমিল্লা সেনানিবাসে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬০ হাজার অয়েল পাম চারা রোপণ করা হয়েছে।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় সোনাবহিনীর উদ্যোগে প্রান্তিক চাষীদের মধ্যে ৫ হাজার পাম গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে। ১৯৭৮ সালে বন বিভাগের মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলার সাতছড়িতে, কক্সবাজারে এবং চট্ট্রগ্রামে অয়েল পাম চারা রোপণ করা হয়েছিল যা এখনও মালয়েশিয়ার চেয়েও বেশি ফলন দিচ্ছে।
এছাড়াও কক্‌্রবাজারের উখিয়া, টাঙ্গাইলের শাইলাজানি, কালিহাতি কলেজ, বাগেরহাটের যাত্রাপুর এবং ফকিরহাটের মূলঘর ইউনিয়নের সোনাখালী, বরগুনার পাথরঘাটা, রংপুরের ভিন্ন জগৎ, হাজী দানেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরার কলারোয়া, যশোরের মনিরামপুর, ঝিনাইদহ এবং রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকাতে শখ করে লাগানো গাছের পরিচর্যা না করা সত্ত্বেও পামের ফলন বাংলাদেশে অয়েল পামের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
বর্ণিত সোনালী সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনাবাদি জমি এবং সড়কপথ, রেলপথ ও গ্রামীণ জনপথগুলোকে পাম চাষের আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে ‘গ্রীন বাংলাদেশ’ নামক এক এনজিও ইতোমধ্যেই দেশের ৪০টি জেলার ২১৩টি থানায় বিভিন্ন উদ্যোক্তার মাঝে নগদে ও কিস্তিতে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ পাম অয়েল চারা গাছ রোপন করেছে।
এ সংস্থা এ পর্যন্ত দিনাজপুরে নিজেদের প্রকল্পে ১২ হাজার চারা রোপণ করেছে। আরো ১ লক্ষ ২০ হাজার চারা রোপন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু এত বড় একটি সম্ভাবনাময় খাতকে শুধু একটি এনজিওর উপর ছেড়ে দিলেই হবে না। মূলত সরকারকেই সার্বিক দায়িত্ব নিতে হবে।
দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌর ভবন চত্বর, মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এবং সব সম্ভাব্য স্থানেই পাম চাষের বিপ্লব ঘটাতে হবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে দ্রব্যমূল্য নিয়ে যে অবস্থা চলছে, তার মূল সমাধান হলো, দ্রব্যমূল্য কমাতে হলে কৃষিখাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আধুনিকায়ন করতে হবে এই খাতের। কৃষকদের স্বল্প সুদে নয় বরং বিনা সুদেই ঋণের সুবিধা দিতে হবে এবং এটা হওয়া উচিত সরাসরি কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে। কোনো এনজিওর মাধ্যমে নয়।
আমরা অতীতে দেখেছি, মুখে সব সরকারের লোকজনই কৃষিতে অগ্রাধিকার ও উন্নতির এবং কৃষিবান্ধব বাস্তবে অঙ্গীকার করেছে কিন্তু কাজে তার প্রতিফলন ঘটায়নি। আর সে জন্য বারে বারেই আমাদের খাদ্যের টানাপোড়েনে পড়তে হয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি করে খাদ্যশস্যের ঘাটতি মেটানো কষ্টসাধ্য হয়েছে।
বলাবাহুল্য স্বল্প খরচে শুধুমাত্র সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে পাম গাছ চাষের মা্যধমে বাংলাদেশ ভোজ্যতেল আমদানি নির্ভরতার বিপরীতে পাম তেল রফতানিকারক দেশ হিসাবে বিশ্ব বাজারে স্থান করে নিতে পারে এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন ঘটিয়ে দারিদ্র্যতা মুক্ত হয়ে খোদ বাংলাদেশই দাতা দেশে পরিণত হতে পারে ইনশাআল্লাহ।
Source:www.al-ihsan.net

Wednesday, May 18, 2011

অয়েল পাম চাষের সম্ভাবনা

অয়েল পাম চাষের সম্ভাবনা

নানা সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। বিশেষত কৃষিতে এ সম্ভাবনা আরও বেশি। এমনি একটি নতুন সম্ভাবনার নাম অয়েল পাম চাষ। খাদ্য শস্যের নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি বর্তমানে ভোজ্যতেলের নিরাপত্তাহীনতা দেশের অন্যতম সমস্যা। প্রতি বছর ভোজ্যতেল আমদানি বাবদ আমাদের বর্তমান প্রায় ১৩০ কোটি ইউএস ডলার ব্যয় হয়। অয়েল পাম চাষ করে আমরা সহজেই ভোজ্যতেল আমদানি বাবদ টাকার একটি উল্লেখযোগ্য অংক সাশ্রয় করতে পারি।
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান ও জলবায়ু অয়েল পাম চাষের জন্য অত্য- উপযোগী। এ দেশের রাঙ্গামাটি, দুদুকছড়ি (খাগড়াছড়ি), কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ এবং চুয়াডাঙ্গার দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলায় অয়েল পাম সন্দেহাতীতভাবে চাষ করা সম্ভব।
দিনাজপুরের হাজী দানেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১টি, ঘাটাইলের রামজীবনপুরে ২টি এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৩টি গাছের সবকটিতে ফল আছে।
সুনিষ্কাশিত প্রায় সবধরনের মাটিতে অয়েল পাম চাষ সম্ভব। বাংলাদেশের কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিলেট, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, পার্বত্য এলাকাসহ ৩০টি কৃষি জলবায়ু অঞ্চলের মধ্যে ২৭টি কৃষি জলবায়ু অঞ্চলেই অয়েল পাম চাষ সম্ভব। উঁচু ও মধ্যম এবং বন্যার পানি আসে কিন্তু বেশিদিন থাকে না এমন জমিতেও অয়েল পাম চাষ করতে হয়।
পৃথিবীতে জমি ব্যবহারের দক্ষতা এবং উৎপাদন ক্ষমতার দিক দিয়ে সব ধরনের তৈল জাতীয় শস্যের (সয়াবিন, সরিষা, তিল, তিষি, সূর্যমুখী ইত্যাদির) মধ্যে অয়েল পামে চারগুণ বেশি তেল বিদ্যমান। বাংলাদেশের অয়েল পামে শতকরা ৬০ ভাগ পাম অয়েল আছে। অয়েল পাম একটি এনার্জি এফিসিয়েন্ট ফসল। চাষ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে সার, বালাইনাশক, ফসল জ্বালানির ব্যবহার তুলনামূলক কম হয়। প্রতিহেক্টর জমিতে ৪ টন পাম অয়েল বছরে উৎপাদিত হয় কিন্তু বর্তমানে মালেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতে হেক্টরপ্রতি ৭ টন পাম অয়েল উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্নজাত উদ্‌ভাবিত হয়েছে।
একটি আ-র্জাতিক সমীক্ষায় প্রকাশ, অন্যান্য কৃষি ফসল চাষ করে যেখানে হেক্টরপ্রতি ১২১০ ইউরো আয় হয়, সেখানে অয়েল পাম চাষ করে ১৬১৭ ইউরো আয় করা সম্ভব অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রতিহেক্টরে অয়েল পাম চাষ করে বছরে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার বেশি আয় করা সম্ভব।
অয়েল পাম যেহেতু একটি পাম জাতীয় গাছ তাই অন্য ফসলের সঙ্গে জায়গা, বাতাস, খাদ্য উপাদান সূর্যালোক ইত্যাদির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে না। উঁচু জমির আইল, শিক্ষাদানের পতিত জমি, ক্যান্টনমেন্ট, রা-ার দুপাশ, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পতিত জমি, পাহাড়ি অঞ্চলের পাদভূমির বিশাল এলাকা এ চাষের আওতায় আনা সম্ভব। উপকূলীয় বিশাল এলাকা অয়েল পাম চাষের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা যায়।
মালেশিয়া ১৯৬০ সালের পর Land Setlement Scheme এর আওতায় অয়েল পাম চাষ ব্যাপকভাবে শুরু করে। দারিদ্র বিমোচন সফল হয়েছে এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাম অয়েল উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ভোজ্যতেলের বিকল্প হিসেবে অয়েল পাম বাণিজ্যিকভিত্তিতে এবং প্রতি বাড়িতে ২/১টি করে চাষ করার পরামর্শ দিয়েছেন। অয়েল পাম সারাবছরই ফল দেয় বিধায় এর উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে জড়িত শ্রমিকদের সারা বছরই কর্মে জড়িত থাকার সুযোগ থাকে।
অয়েল পাম গাছ রোপণের তৃতীয় বছর থেকে ২৫ বছর পর্য- লাভজনক ফলন দেয়। যেকোন দেশের দারিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য একটি আয়বর্ধক ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের অয়েল পাম চাষকে দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম একটি উৎস হিসেবে বিবেচনা করে কাজে লাগানো হয়েছে।
আমি কুমিল্লা সদর উপজেলার মনাগ্রামে ১৬টি অয়েল পামের চারা দিয়ে চাষ শুরু করেছি। আগামী দুবছরের মধ্যে অয়েল পাম চাষ থেকে আমি নিজে যেমন লাভবান হব তেমনি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে নতুনদের জন্য। বৃহত্তর কুমিল্লাতে আমি একমাত্র পাম চাষের উদ্যোক্তা বললে ভুল বলা হবে না। দিনবদলের এই সরকারের মাননীয় কৃষি মন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- এ ব্যাপারে আগ্রহী চাষিদের সব রকম সুযোগ-সুবিধা দেবার জন্য। আমি নিজেই উদ্যোগ গ্রহণ করে কয়েকজন চাষিকে পাম চাষ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখন প্রতিদিন আমার কাছে আগ্রহী চাষিরা আসছেন। আমি নিজের হাতে কুমিল্লা প্রসাশকের বাসভবনের সামনে দুটি অয়েল পামের চারা রোপণ করেছি সবাইকে পাম চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য। এছাড়া আমি কুমিল্লা বার্ড-এ ৩৬টি অয়েল পামের চারা রোপণ করেছি।
বাংলাদেশ সীমান্তে-র সরকারি খাস জমিতে অয়েল পাম চারা রোপণের মাধ্যমে বিডিআর এর সহায়তায় বিশেষ আয়বর্ধক সামাজিক কর্মসূচি হাতে নেয়া যেতে পারে বলে আমি মনে করি।
মনজুর হোসেন, কৃষক, কুমিল্লা
onishchit.blogspot.com