Sunday, September 18, 2011

ঠাকুরগাঁওয়ের দিগন্তজুড়ে পামবাগান

ঠাকুরগাঁওয়ের দিগন্তজুড়ে পামবাগান
আবদুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও


বিশ্বের ভোজ্যতেলের বেশির ভাগ জায়গা ধরে আছে পাম তেল। বাংলাদেশকে এ তেল আমদানি করতে হয়। আর এ তেল হয় পাম গাছের ফল থেকে। আশার কথা এ পাম গাছ এখন বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। এক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গের জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলার আনাচে কানাচে ভরে যাচ্ছে পাম গাছে। লাগানো হয়েছে ৩৫ হাজার পাম চারা। ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অন্তত ৬০টি পামবাগান। তবে এ কাজে সরকার না যতটা এগিয়ে এসেছে তার চেয়ে বেশি এগিয়ে এসেছে কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে গ্রিন বাংলা, স্বনির্ভর শ্যামল বাংলা, বখতিয়ার এগ্রো প্রজেক্ট কোম্পানি অন্যতম।
সদর উপজেলার ইসলামবাগ গ্রামের আলী আকবরসহ বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা বাগান করেছেন। আলী আকবরের বাগানে লাগানো হয়েছে ৮৮০টি চারা। এ ছাড়াও রুহিয়ার বিপ্লব ১৩০, ভাতগাঁওয়ের ফুলেন বর্মণ ৫০০, ইসলামনগরের আশরাফ আলী ৩৮৬, হরিনারায়ণপুরের রবীন্দ্রনাথ দত্ত ৩০২, মোলানী গ্রামের মমিনুল ইসলাম ২০০, রহিমানপুরের জয়নাল আবেদিন ১৪৫, বালিয়াডাঙ্গীর এহসানউল্লাহ ২০০ ও কচুবাড়ীর হিরু জাফর ২০০ গাছের চারা দিয়ে বাগান সাজিয়েছেন। ভাতগাঁও গ্রামের পাম চাষি ফুলেন চন্দ্র জানান, তিনি লিচুর বাগান করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। কিন্তু লিচুর চেয়ে পাম গাছ থেকে বেশি লাভবান হওয়া যায় বলে তিনি এ বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি জানান, গাছে ফল আসা শুরু করলে বছরে প্রতি বিঘা জমি থেকে অন্তত পাঁচ-সাত লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি, প্রকৃতি ও আবহাওয়া পাম চাষের জন্য উপযুক্ত। জেলার মাটি বেলে-দোআঁশ। গড় বৃষ্টিপাত এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ১০০ মিলিমিটার। আর্দ্রতা ৭০-৮০ ভাগ। সূর্যালোক আট-নয় ঘণ্টা। পাম চাষের ক্ষেত্রে এসব শর্ত ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার চেয়ে ভালো। কেননা পাম চাষে এ দুটি দেশ এগিয়ে আছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মতে, পাম চারা লাগানোর আগে জমিতে দুই ফুট বাই দুই ফুট পরিমাপের গর্ত করতে হয়। গর্তে ১০-১৫ কেজি পচা গোবর সারের সঙ্গে কিছু রাসায়নিক সার ব্যবহার করে গর্তের মাটি ভরাতে হয়। বাগানের ২০ ফুট পর পর চারা সারি করে লাগাতে হবে। তবে চারা বর্ষাকালে লাগানোই ভালো। পাম গাছ লাগানোর পাঁচ বছরের মধ্যে গাছে ফল ধরে এবং সারা বছর ফল পাওয়া যায়। একটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ৩০০-৪৫০ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। উৎপাদিত ফল থেকে ৫০-৭৫ লিটার পর্যন্ত পাম তেল উৎপাদন করা সম্ভব। বখতিয়ার এগ্রো প্রজেক্টের অপর এক কর্মকর্তা জানান, চারা সরবরাহের পাশাপাশি পাম ফলের নায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ফল সংগ্রহ ও ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় জেলার সুবিধাজনক স্থানে ওয়েল প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বেলায়েত হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে বেসরকারি উদ্যোগে বেশকিছু পামবাগান গড়ে উঠেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো গাছ উৎপাদনে যায়নি। তবে এ জেলার মাটি, আবহাওয়া ও প্রকৃতি বিবেচনায় এখানে পাম চাষ লাভজনক বলে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জেলা প্রশাসক মুহা. শহিদুজ্জামান জানান, পাম ওয়েল বিক্রি করে ৩০ বছরে দরিদ্র অবস্থা থেকে মালয়েশিয়া উন্নতশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সেই দিক বিবেচনায় ঠাকুরগাঁও জেলাও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলেছে।
Source: http://www.bd-pratidin.com, 18th Sep. 2011

No comments:

Post a Comment