Thursday, May 19, 2011

পাম গাছ চাষের মাধ্যমে সম্ভব সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার তেল রফতানি।

অপ্রচলিত কিন্তু সম্ভাবনাময় কৃষি উৎপাদনে বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনৈতিক চিত্র:
পাম গাছ চাষের মাধ্যমে সম্ভব সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার তেল রফতানি।

সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
‘দৈনিক আল ইহসান’ ডেস্ক সূত্রে জানা গেছে, ‘পাঁচবিবি পৌরসভার প্রতিটি বাড়িতে পাম গাছের দুটি করে চারা বিতরণ করে পাঁচবিবিকে পাম গাছের পৌরসভা বানানোর মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন হাবিবুর রহমান হাবিব। এ উপলক্ষে জনাব হাবিব নিজ উদ্যোগে পৌরসভার ৬ হাজার পরিবারের মধ্যে সাড়ে ১২ হাজার পাম চারা বিতরণ করেন। চারার পাশাপাশি চারা রোপণ ও তেল আহরণ পদ্ধতি সংবলিত একটি করে লিফলেটও বিতরণ করেছেন। চারাগুলো সঠিকভাবে রোপণ ও পরিচর্যা হচ্ছে কি না তা তদারক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণও করা হয়েছে। কোন উদ্দেশ্যে তিনি এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ভাবছি ৪/৫ বছর পরের কথা। ৪/৫ বছর পর থেকে পাঁচবিবি পৌরসভার মানুষ আর ভোজ্য তেল কিনবে না। বরং অতিরিক্ত তেল অনেকেই বিক্রি করতে পারবে। তিনি মালয়েশিয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, মালয়েশিয়া একসময় আমাদের মতোই দরিদ্র দেশ ছিল। আজ তারা পামঅয়েলের সবুজ বিপ্লব ঘটিয়ে ধনী দেশে পরিণত হয়েছে।”
বলাবাহুল্য, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌরসভার হাবিবের কথা আক্ষরিক অর্থেই সত্য।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে বিশেষ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কৃষিখাতে নজর দিতে হবে।
কারণ কৃষিখাতে রয়েছে অনেক অনাবিষ্কৃত সোনালী সম্ভাবনা।
প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী আমাদের দেশে দৈনিক গড়ে ৬ হাজার মেট্রিকটন এবং বছরে ২১ লক্ষ ৯০ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। যার সিংহভাগই আমাদের আমদানি করতে হয়। এর আনুমানিক মূল্য হচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে পামগাছ চাষে সার্বিকভাবে বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র।
দেশের ২২ লাখ টন ভোজ্যতেলের বর্তমান চাহিদা মেটাতে মাত্র তিন কোটি পাম গাছের উৎপাদন প্রয়োজন। কিন্তু যদি পরিবার প্রতি ৫টি করে পাম গাছ রোপণ করে তাহলে প্রতি বছর আমাদের চাহিদা পূরণ করে ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের পাম তেল রফতানি করা সম্ভব।
একজন কৃষক এক বিঘা জমিতে সাধারণ ফসল থেকে সকল খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করে সেখানে একই পরিমাণ জমিতে পাম চাষ করে বছরে কমপক্ষে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার থেকে ৩ লক্ষ কিংবা তারও অধিক আয় করা সম্ভব।
পরিবেশগত দিক দিয়ে পাম অত্যন্ত পরিবেশ বান্ধব একটি উদ্ভিদ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এটি বাতাসের গতি রোধ করে বাতাসের ক্ষিপ্রতা কমিয়ে দেয়, ফলে লোকালয়ে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়। পাম গাছ দীর্ঘজীবী এবং শক্তিশালী গাছ হওয়ায় ঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষ ও সম্পদ রক্ষা করতে উপযোগী। যা আমাদের উপকূলীয় এলাকার মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ৩৮ বছর ধরে বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এখানের মাটি ও আবহাওয়া অয়েল পাম চাষের উপযোগী। কোন কোন স্থানে মালয়েশিয়ার চেয়েও পামের ভালো ফলন আশা করা যায়।
বাংলাদেশে প্রথম সিলেটের হবিগঞ্জের সাতছড়িতেস্থানে ১৯৭৬-৭৮ সালে কিছু পাম গাছ রোপণ করা হয়। পরে ১৯৭৯ সাল থেকে পাম চাষ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে বান্দরবান, রংপুর, বগুড়া, ঘাটাইল, সিলেট, খাগড়াছড়ি, যশোর, ঢাকা, সাভার ও কুমিল্লা সেনানিবাসে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬০ হাজার অয়েল পাম চারা রোপণ করা হয়েছে।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় সোনাবহিনীর উদ্যোগে প্রান্তিক চাষীদের মধ্যে ৫ হাজার পাম গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে। ১৯৭৮ সালে বন বিভাগের মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলার সাতছড়িতে, কক্সবাজারে এবং চট্ট্রগ্রামে অয়েল পাম চারা রোপণ করা হয়েছিল যা এখনও মালয়েশিয়ার চেয়েও বেশি ফলন দিচ্ছে।
এছাড়াও কক্‌্রবাজারের উখিয়া, টাঙ্গাইলের শাইলাজানি, কালিহাতি কলেজ, বাগেরহাটের যাত্রাপুর এবং ফকিরহাটের মূলঘর ইউনিয়নের সোনাখালী, বরগুনার পাথরঘাটা, রংপুরের ভিন্ন জগৎ, হাজী দানেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরার কলারোয়া, যশোরের মনিরামপুর, ঝিনাইদহ এবং রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকাতে শখ করে লাগানো গাছের পরিচর্যা না করা সত্ত্বেও পামের ফলন বাংলাদেশে অয়েল পামের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
বর্ণিত সোনালী সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনাবাদি জমি এবং সড়কপথ, রেলপথ ও গ্রামীণ জনপথগুলোকে পাম চাষের আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে ‘গ্রীন বাংলাদেশ’ নামক এক এনজিও ইতোমধ্যেই দেশের ৪০টি জেলার ২১৩টি থানায় বিভিন্ন উদ্যোক্তার মাঝে নগদে ও কিস্তিতে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ পাম অয়েল চারা গাছ রোপন করেছে।
এ সংস্থা এ পর্যন্ত দিনাজপুরে নিজেদের প্রকল্পে ১২ হাজার চারা রোপণ করেছে। আরো ১ লক্ষ ২০ হাজার চারা রোপন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু এত বড় একটি সম্ভাবনাময় খাতকে শুধু একটি এনজিওর উপর ছেড়ে দিলেই হবে না। মূলত সরকারকেই সার্বিক দায়িত্ব নিতে হবে।
দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌর ভবন চত্বর, মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এবং সব সম্ভাব্য স্থানেই পাম চাষের বিপ্লব ঘটাতে হবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে দ্রব্যমূল্য নিয়ে যে অবস্থা চলছে, তার মূল সমাধান হলো, দ্রব্যমূল্য কমাতে হলে কৃষিখাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আধুনিকায়ন করতে হবে এই খাতের। কৃষকদের স্বল্প সুদে নয় বরং বিনা সুদেই ঋণের সুবিধা দিতে হবে এবং এটা হওয়া উচিত সরাসরি কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে। কোনো এনজিওর মাধ্যমে নয়।
আমরা অতীতে দেখেছি, মুখে সব সরকারের লোকজনই কৃষিতে অগ্রাধিকার ও উন্নতির এবং কৃষিবান্ধব বাস্তবে অঙ্গীকার করেছে কিন্তু কাজে তার প্রতিফলন ঘটায়নি। আর সে জন্য বারে বারেই আমাদের খাদ্যের টানাপোড়েনে পড়তে হয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি করে খাদ্যশস্যের ঘাটতি মেটানো কষ্টসাধ্য হয়েছে।
বলাবাহুল্য স্বল্প খরচে শুধুমাত্র সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে পাম গাছ চাষের মা্যধমে বাংলাদেশ ভোজ্যতেল আমদানি নির্ভরতার বিপরীতে পাম তেল রফতানিকারক দেশ হিসাবে বিশ্ব বাজারে স্থান করে নিতে পারে এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন ঘটিয়ে দারিদ্র্যতা মুক্ত হয়ে খোদ বাংলাদেশই দাতা দেশে পরিণত হতে পারে ইনশাআল্লাহ।
Source:www.al-ihsan.net

No comments:

Post a Comment