Friday, May 20, 2011

সিলেটে ডা. জামালের নার্সারি বিপ্লব: সবুজ বৃক্ষের তরল স্বর্ণ

সিলেটে ডা. জামালের নার্সারি বিপ্লব: সবুজ বৃক্ষের তরল স্বর্ণ


নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় পাম গাছের নার্সারি করে এলাকায় বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছেন দক্ষিণ সুরমার ডা. জামাল আহমেদ। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি রোপণ করছেন বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা। উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের তুড়ুকখলা গ্রামের জামাল আহমেদ হোমিও চিকিৎসক। এ অঞ্চলে তিনি জামাল ডাক্তার নামে বেশ পরিচিত। ২০০৮ সালে মালয়েশিয়া থেকে পাম গাছের বেশ কিছু বীজ সংগ্রহ করে তিনি বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করেন। রোপণকৃত বীজ থেকে চারা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে।
পরবর্তীতে তিনি আবার মালয়েশিয়া থেকে ১ লক্ষাধিক পাম গাছের বীজ সংগ্রহ করেন। এ বীজ বাড়ির আঙ্গিনা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী একটি নিজস্ব জমিতে রোপণ করেন। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে তার সবুজ বৃক্ষের বিস্ময়কর বিপ্লবের কথা। চারা নিতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসেন। অনেকে দেখতে আসেন সবুজ বৃক্ষের তরল স্বর্ণ নামক নার্সারিটিকে। রোপণকৃত চারা বিক্রির সুবিধাকল্পে তিনি দাউদপুর চৌধুরী বাজারে এনসিসি ব্যাংক লালদিঘী শাখার অর্থায়নে জালালাবাদ এগ্রো কমপ্লেক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সেখানে পাম গাছের চারা রেখে বিক্রয় করছেন। জালালাবাদ এগ্রো কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, ছোট বড় প্রায় দেড় লাখ পাম গাছের চারা রয়েছে। প্রতিটি চারা প্রাথমিকভাবে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বীজ সংগ্রহ, চারা রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রায় ১ কোটি টাকা তিনি বিনিয়োগ করেন। কাঁদি ধরা চারা তিনি ৩ বছর পূর্বে লাগিয়ে ছিলেন। জনসাধারণকে পাম গাছ রোপণের জন্য উৎসাহিত করতে প্রতি সপ্তাহে ২ দিন তার প্রতিষ্ঠানে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের যৌথ সচিত্র সিডি প্রদর্শন করেন। সিডি ফুটেজ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতি গাছে বছরে ১০/১২টি কাঁধি ধরে। প্রতি কাঁদির ওজন মালয়েশিয়াতে ২০-৪০ কেজি হলেও বাংলাদেশে ৪০-৬৫ কেজি পর্যন্ত হচ্ছে। পাম গাছ রোপণের ৩/৪ বছর পর থেকে প্রতি কাদি থেকে কমপক্ষে ৫০ লিটার পাম অয়েল পাওয়া যেতে পারে, যার বাজার মূল্য ৩ হাজার টাকা। বাড়ির আশপাশে ও পতিত জমিতে ১০০টি গাছ রোপণ করলে বছরে ৩ লাখ টাকা আয় হবে। এরই মধ্যে ডা. জামাল দেশের বিভিন্ন স্থানে পাম গাছ রোপণ করে নিজে লাভবান হোন ও দেশকে সমৃদ্ধিশালী করুন নামক সেমিনারে আয়োজন করেন। এ সেমিনার দেশের কৃষিবিদদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তার নার্সারিতে শুধু পাম গাছের চারাই নয়, অন্যান্য আরও অনেক ফলদ, বনজ এবং ঔষধি গাছের চারা রয়েছে। যা থেকে প্রাপ্ত মাসিক আয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা হতে পারে। সুরমা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ডা. জামালের এ উদ্যোগ নিশ্চয় প্রশংসার দাবিদার। এতে তিনি শুধু আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন না, দেশকেও সমৃদ্ধিশালী করতে কাজ করছেন।
শফিক আহমদ

Source: Bangladesh Pratidin, 18th May-2011

Thursday, May 19, 2011

বান্দরবানে ৩ একর জমির পাম গাছে ফল

বান্দরবানে ৩ একর জমির পাম গাছে ফল

বান্দরবান পার্বত্য জেলায় পাম ওয়েল চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে রাজভিলা ইউনিয়নের বাগমারা এলাকায় কাজল মাস্টারের পাম ওয়েল বাগানে ফুল ও ফল আসতে শুরু করেছে।

তার বাগানে ২ বছর ৩ মাস বয়সী ৪শ’টি পাম গাছের মধ্যে ২৫০টিতেই ফুল ও ফল আসায় এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে সম্ভাবনাময় পাম চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। মঙ্গলবার সকালে বাগমারায় কাজল মাস্টারের বিশাল পাম চাষ বাগান পরিদর্শনকালে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাগামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং আদর্শ ফলদ-বনজ ও পাম চাষী কাজল কান্তি দাশ জানিয়েছেন, তিনি ২ বছর ৩ মাস আগে বিশেষ ব্যবস্থায় সংগ্রহ করে প্রায় ৩ একর ভূমিতে ৪শ’টি পাম ওয়েল গাছের চারা রোপণ করেন। বান্দরবান সেনা রিজিয়নের সহায়তায় ওইসব পাম চারা সংগ্রহ করার পর পরীক্ষামূলকভাবে পাম চারাগুলো রোপণ করা হয় জমিতে। নিয়মিত পরিচর্যার কারণে একটি চারাও মারা যায়নি,সবগুলো সবল হয়েই ক্রমবিকাশ ঘটছে।তিনি বলেন, চারা লাগানোর মাত্র ১বছর ৩ মাস সময়ের মধ্যেই গত বছর প্রায় ২০টি গাছে ফুল আসে, তবে ফল তেমন ধরেনি। চলতি মৌসুমে ৪শ’টি পাম গাছের মধ্যে প্রায় ২৫০টি গাছে ফুল ও ফল ধরেছে। ঢাকা ও টাংগাইল পাম ওয়েল কোম্পানী থেকে মাঠ কর্মকর্তাদের এ বাগান পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে।

পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের ৭টি উপজেলায় বিক্ষিপ্তভাবেই পাম্প ওয়েল চাষ শুরু হয়েছে সাম্প্রতিক সময় থেকে। ফলদ ও বনজ বাগানে সাথী গাছ হিসেবেই মূলত চাষীরা এ পাম গাছের চারা লাগাচ্ছেন। তবে পাম চারার কোন নার্সারী না থাকায় জেলার বাইর থেকেই পাম চারা সংগ্রহ করতে হচ্ছে আগ্রহী চাষীদের। প্রতিটি পাম ওয়েল চারা গড়ে ৬শ’ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

বাগমারায় কাজল মাস্টারের বাগানেই সবচেয়ে বেশি পাম গাছ লাগানো হয়েছে। এ পাম বাগান জেলায় একটি মডেল বাগান হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছে। জেলায় স্থানীয়ভাবে পাম চাষের ব্যাপারে পরামর্শ বা দিক-নির্দেশনা প্রদানের কোন কর্তৃপক্ষ না থাকা সত্বেও পাম চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজল মাস্টার বিশাল পাম বাগান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।

পাহাড়ের গ্রামে গ্রামেই সম্প্রসারিত হচ্ছে এ পাম চাষ। ১০-২০টি করে পাম চারা রোপণ করেছেন অনেকেই তাদের ফলদ বাগানে। আগামী ৫ বছরের মধ্যেই পুরোদমে পাম গাছে পাম উৎপন্ন হবে। এতে প্রতিটি পাম গাছে প্রতিমৌসুমে গড়ে ৫২ কেজি পর্যন্ত পাম ফল এবং কাঁচা পাম তেল সংগ্রহ করা সম্ভব বলেও কাজল মাস্টার জানান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক উদয়শংকর মুৎসুদ্দী জানান, জেলার মাটি এবং আবহাওয়া পাম চাষের জন্য অনুকূল ও খুবই উপযোগী। চাষীরা সহজ ও কমমূল্যে পাম চারা পেলে অর্থকরী এ পাম চাষ দ্রুত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। বেসরকারি তথ্যানুযায়ী জেলায় বর্তমানে শতাধিক একরের জমিতে পাম চাষ হচ্ছে বলে জানা গেছে।
Source: www.dainikazadi.org, 21th May-2011

পাম গাছ চাষের মাধ্যমে সম্ভব সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার তেল রফতানি।

অপ্রচলিত কিন্তু সম্ভাবনাময় কৃষি উৎপাদনে বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনৈতিক চিত্র:
পাম গাছ চাষের মাধ্যমে সম্ভব সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার তেল রফতানি।

সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
‘দৈনিক আল ইহসান’ ডেস্ক সূত্রে জানা গেছে, ‘পাঁচবিবি পৌরসভার প্রতিটি বাড়িতে পাম গাছের দুটি করে চারা বিতরণ করে পাঁচবিবিকে পাম গাছের পৌরসভা বানানোর মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন হাবিবুর রহমান হাবিব। এ উপলক্ষে জনাব হাবিব নিজ উদ্যোগে পৌরসভার ৬ হাজার পরিবারের মধ্যে সাড়ে ১২ হাজার পাম চারা বিতরণ করেন। চারার পাশাপাশি চারা রোপণ ও তেল আহরণ পদ্ধতি সংবলিত একটি করে লিফলেটও বিতরণ করেছেন। চারাগুলো সঠিকভাবে রোপণ ও পরিচর্যা হচ্ছে কি না তা তদারক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণও করা হয়েছে। কোন উদ্দেশ্যে তিনি এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ভাবছি ৪/৫ বছর পরের কথা। ৪/৫ বছর পর থেকে পাঁচবিবি পৌরসভার মানুষ আর ভোজ্য তেল কিনবে না। বরং অতিরিক্ত তেল অনেকেই বিক্রি করতে পারবে। তিনি মালয়েশিয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, মালয়েশিয়া একসময় আমাদের মতোই দরিদ্র দেশ ছিল। আজ তারা পামঅয়েলের সবুজ বিপ্লব ঘটিয়ে ধনী দেশে পরিণত হয়েছে।”
বলাবাহুল্য, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌরসভার হাবিবের কথা আক্ষরিক অর্থেই সত্য।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে বিশেষ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কৃষিখাতে নজর দিতে হবে।
কারণ কৃষিখাতে রয়েছে অনেক অনাবিষ্কৃত সোনালী সম্ভাবনা।
প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী আমাদের দেশে দৈনিক গড়ে ৬ হাজার মেট্রিকটন এবং বছরে ২১ লক্ষ ৯০ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। যার সিংহভাগই আমাদের আমদানি করতে হয়। এর আনুমানিক মূল্য হচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে পামগাছ চাষে সার্বিকভাবে বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র।
দেশের ২২ লাখ টন ভোজ্যতেলের বর্তমান চাহিদা মেটাতে মাত্র তিন কোটি পাম গাছের উৎপাদন প্রয়োজন। কিন্তু যদি পরিবার প্রতি ৫টি করে পাম গাছ রোপণ করে তাহলে প্রতি বছর আমাদের চাহিদা পূরণ করে ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের পাম তেল রফতানি করা সম্ভব।
একজন কৃষক এক বিঘা জমিতে সাধারণ ফসল থেকে সকল খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করে সেখানে একই পরিমাণ জমিতে পাম চাষ করে বছরে কমপক্ষে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার থেকে ৩ লক্ষ কিংবা তারও অধিক আয় করা সম্ভব।
পরিবেশগত দিক দিয়ে পাম অত্যন্ত পরিবেশ বান্ধব একটি উদ্ভিদ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এটি বাতাসের গতি রোধ করে বাতাসের ক্ষিপ্রতা কমিয়ে দেয়, ফলে লোকালয়ে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়। পাম গাছ দীর্ঘজীবী এবং শক্তিশালী গাছ হওয়ায় ঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষ ও সম্পদ রক্ষা করতে উপযোগী। যা আমাদের উপকূলীয় এলাকার মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ৩৮ বছর ধরে বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এখানের মাটি ও আবহাওয়া অয়েল পাম চাষের উপযোগী। কোন কোন স্থানে মালয়েশিয়ার চেয়েও পামের ভালো ফলন আশা করা যায়।
বাংলাদেশে প্রথম সিলেটের হবিগঞ্জের সাতছড়িতেস্থানে ১৯৭৬-৭৮ সালে কিছু পাম গাছ রোপণ করা হয়। পরে ১৯৭৯ সাল থেকে পাম চাষ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে বান্দরবান, রংপুর, বগুড়া, ঘাটাইল, সিলেট, খাগড়াছড়ি, যশোর, ঢাকা, সাভার ও কুমিল্লা সেনানিবাসে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬০ হাজার অয়েল পাম চারা রোপণ করা হয়েছে।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় সোনাবহিনীর উদ্যোগে প্রান্তিক চাষীদের মধ্যে ৫ হাজার পাম গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে। ১৯৭৮ সালে বন বিভাগের মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলার সাতছড়িতে, কক্সবাজারে এবং চট্ট্রগ্রামে অয়েল পাম চারা রোপণ করা হয়েছিল যা এখনও মালয়েশিয়ার চেয়েও বেশি ফলন দিচ্ছে।
এছাড়াও কক্‌্রবাজারের উখিয়া, টাঙ্গাইলের শাইলাজানি, কালিহাতি কলেজ, বাগেরহাটের যাত্রাপুর এবং ফকিরহাটের মূলঘর ইউনিয়নের সোনাখালী, বরগুনার পাথরঘাটা, রংপুরের ভিন্ন জগৎ, হাজী দানেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরার কলারোয়া, যশোরের মনিরামপুর, ঝিনাইদহ এবং রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকাতে শখ করে লাগানো গাছের পরিচর্যা না করা সত্ত্বেও পামের ফলন বাংলাদেশে অয়েল পামের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
বর্ণিত সোনালী সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনাবাদি জমি এবং সড়কপথ, রেলপথ ও গ্রামীণ জনপথগুলোকে পাম চাষের আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে ‘গ্রীন বাংলাদেশ’ নামক এক এনজিও ইতোমধ্যেই দেশের ৪০টি জেলার ২১৩টি থানায় বিভিন্ন উদ্যোক্তার মাঝে নগদে ও কিস্তিতে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ পাম অয়েল চারা গাছ রোপন করেছে।
এ সংস্থা এ পর্যন্ত দিনাজপুরে নিজেদের প্রকল্পে ১২ হাজার চারা রোপণ করেছে। আরো ১ লক্ষ ২০ হাজার চারা রোপন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু এত বড় একটি সম্ভাবনাময় খাতকে শুধু একটি এনজিওর উপর ছেড়ে দিলেই হবে না। মূলত সরকারকেই সার্বিক দায়িত্ব নিতে হবে।
দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌর ভবন চত্বর, মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এবং সব সম্ভাব্য স্থানেই পাম চাষের বিপ্লব ঘটাতে হবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে দ্রব্যমূল্য নিয়ে যে অবস্থা চলছে, তার মূল সমাধান হলো, দ্রব্যমূল্য কমাতে হলে কৃষিখাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আধুনিকায়ন করতে হবে এই খাতের। কৃষকদের স্বল্প সুদে নয় বরং বিনা সুদেই ঋণের সুবিধা দিতে হবে এবং এটা হওয়া উচিত সরাসরি কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে। কোনো এনজিওর মাধ্যমে নয়।
আমরা অতীতে দেখেছি, মুখে সব সরকারের লোকজনই কৃষিতে অগ্রাধিকার ও উন্নতির এবং কৃষিবান্ধব বাস্তবে অঙ্গীকার করেছে কিন্তু কাজে তার প্রতিফলন ঘটায়নি। আর সে জন্য বারে বারেই আমাদের খাদ্যের টানাপোড়েনে পড়তে হয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি করে খাদ্যশস্যের ঘাটতি মেটানো কষ্টসাধ্য হয়েছে।
বলাবাহুল্য স্বল্প খরচে শুধুমাত্র সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে পাম গাছ চাষের মা্যধমে বাংলাদেশ ভোজ্যতেল আমদানি নির্ভরতার বিপরীতে পাম তেল রফতানিকারক দেশ হিসাবে বিশ্ব বাজারে স্থান করে নিতে পারে এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন ঘটিয়ে দারিদ্র্যতা মুক্ত হয়ে খোদ বাংলাদেশই দাতা দেশে পরিণত হতে পারে ইনশাআল্লাহ।
Source:www.al-ihsan.net

Wednesday, May 18, 2011

অয়েল পাম চাষের সম্ভাবনা

অয়েল পাম চাষের সম্ভাবনা

নানা সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। বিশেষত কৃষিতে এ সম্ভাবনা আরও বেশি। এমনি একটি নতুন সম্ভাবনার নাম অয়েল পাম চাষ। খাদ্য শস্যের নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি বর্তমানে ভোজ্যতেলের নিরাপত্তাহীনতা দেশের অন্যতম সমস্যা। প্রতি বছর ভোজ্যতেল আমদানি বাবদ আমাদের বর্তমান প্রায় ১৩০ কোটি ইউএস ডলার ব্যয় হয়। অয়েল পাম চাষ করে আমরা সহজেই ভোজ্যতেল আমদানি বাবদ টাকার একটি উল্লেখযোগ্য অংক সাশ্রয় করতে পারি।
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান ও জলবায়ু অয়েল পাম চাষের জন্য অত্য- উপযোগী। এ দেশের রাঙ্গামাটি, দুদুকছড়ি (খাগড়াছড়ি), কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ এবং চুয়াডাঙ্গার দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলায় অয়েল পাম সন্দেহাতীতভাবে চাষ করা সম্ভব।
দিনাজপুরের হাজী দানেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১টি, ঘাটাইলের রামজীবনপুরে ২টি এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৩টি গাছের সবকটিতে ফল আছে।
সুনিষ্কাশিত প্রায় সবধরনের মাটিতে অয়েল পাম চাষ সম্ভব। বাংলাদেশের কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিলেট, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, পার্বত্য এলাকাসহ ৩০টি কৃষি জলবায়ু অঞ্চলের মধ্যে ২৭টি কৃষি জলবায়ু অঞ্চলেই অয়েল পাম চাষ সম্ভব। উঁচু ও মধ্যম এবং বন্যার পানি আসে কিন্তু বেশিদিন থাকে না এমন জমিতেও অয়েল পাম চাষ করতে হয়।
পৃথিবীতে জমি ব্যবহারের দক্ষতা এবং উৎপাদন ক্ষমতার দিক দিয়ে সব ধরনের তৈল জাতীয় শস্যের (সয়াবিন, সরিষা, তিল, তিষি, সূর্যমুখী ইত্যাদির) মধ্যে অয়েল পামে চারগুণ বেশি তেল বিদ্যমান। বাংলাদেশের অয়েল পামে শতকরা ৬০ ভাগ পাম অয়েল আছে। অয়েল পাম একটি এনার্জি এফিসিয়েন্ট ফসল। চাষ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে সার, বালাইনাশক, ফসল জ্বালানির ব্যবহার তুলনামূলক কম হয়। প্রতিহেক্টর জমিতে ৪ টন পাম অয়েল বছরে উৎপাদিত হয় কিন্তু বর্তমানে মালেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতে হেক্টরপ্রতি ৭ টন পাম অয়েল উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্নজাত উদ্‌ভাবিত হয়েছে।
একটি আ-র্জাতিক সমীক্ষায় প্রকাশ, অন্যান্য কৃষি ফসল চাষ করে যেখানে হেক্টরপ্রতি ১২১০ ইউরো আয় হয়, সেখানে অয়েল পাম চাষ করে ১৬১৭ ইউরো আয় করা সম্ভব অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রতিহেক্টরে অয়েল পাম চাষ করে বছরে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার বেশি আয় করা সম্ভব।
অয়েল পাম যেহেতু একটি পাম জাতীয় গাছ তাই অন্য ফসলের সঙ্গে জায়গা, বাতাস, খাদ্য উপাদান সূর্যালোক ইত্যাদির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে না। উঁচু জমির আইল, শিক্ষাদানের পতিত জমি, ক্যান্টনমেন্ট, রা-ার দুপাশ, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পতিত জমি, পাহাড়ি অঞ্চলের পাদভূমির বিশাল এলাকা এ চাষের আওতায় আনা সম্ভব। উপকূলীয় বিশাল এলাকা অয়েল পাম চাষের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা যায়।
মালেশিয়া ১৯৬০ সালের পর Land Setlement Scheme এর আওতায় অয়েল পাম চাষ ব্যাপকভাবে শুরু করে। দারিদ্র বিমোচন সফল হয়েছে এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাম অয়েল উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ভোজ্যতেলের বিকল্প হিসেবে অয়েল পাম বাণিজ্যিকভিত্তিতে এবং প্রতি বাড়িতে ২/১টি করে চাষ করার পরামর্শ দিয়েছেন। অয়েল পাম সারাবছরই ফল দেয় বিধায় এর উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে জড়িত শ্রমিকদের সারা বছরই কর্মে জড়িত থাকার সুযোগ থাকে।
অয়েল পাম গাছ রোপণের তৃতীয় বছর থেকে ২৫ বছর পর্য- লাভজনক ফলন দেয়। যেকোন দেশের দারিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য একটি আয়বর্ধক ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের অয়েল পাম চাষকে দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম একটি উৎস হিসেবে বিবেচনা করে কাজে লাগানো হয়েছে।
আমি কুমিল্লা সদর উপজেলার মনাগ্রামে ১৬টি অয়েল পামের চারা দিয়ে চাষ শুরু করেছি। আগামী দুবছরের মধ্যে অয়েল পাম চাষ থেকে আমি নিজে যেমন লাভবান হব তেমনি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে নতুনদের জন্য। বৃহত্তর কুমিল্লাতে আমি একমাত্র পাম চাষের উদ্যোক্তা বললে ভুল বলা হবে না। দিনবদলের এই সরকারের মাননীয় কৃষি মন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- এ ব্যাপারে আগ্রহী চাষিদের সব রকম সুযোগ-সুবিধা দেবার জন্য। আমি নিজেই উদ্যোগ গ্রহণ করে কয়েকজন চাষিকে পাম চাষ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখন প্রতিদিন আমার কাছে আগ্রহী চাষিরা আসছেন। আমি নিজের হাতে কুমিল্লা প্রসাশকের বাসভবনের সামনে দুটি অয়েল পামের চারা রোপণ করেছি সবাইকে পাম চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য। এছাড়া আমি কুমিল্লা বার্ড-এ ৩৬টি অয়েল পামের চারা রোপণ করেছি।
বাংলাদেশ সীমান্তে-র সরকারি খাস জমিতে অয়েল পাম চারা রোপণের মাধ্যমে বিডিআর এর সহায়তায় বিশেষ আয়বর্ধক সামাজিক কর্মসূচি হাতে নেয়া যেতে পারে বলে আমি মনে করি।
মনজুর হোসেন, কৃষক, কুমিল্লা
onishchit.blogspot.com