Friday, May 13, 2011

পাম ফলের তরল সোনা, বদলে দিবে বাংলাদেশ

পাম ফলের তরল সোনা, বদলে দিবে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিদিনই বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। সোনার হরিণ চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে। এ সময়ে পামচাষ হতে পারে আয়ের তুলনামূলক সহজ উপায়।

কৃষি-গবেষকদের নিসৃত বানী ঃ

বাংলাদেশ পাম অয়েল উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম খালেদ মাসুদ ও শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডঃ এ ফয়েজ মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন পাম চাষ বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ন বিবৃতি দিয়েছেন। বাংলাদেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি এবং উর্বর ক্ষমতা মালয়েশিয়ার তুলনায় দ্বি-গুন। মালেশিয়ার বানিজ্য মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সে দেশের জাতীয় অর্থনীতির ৩০ শতাংশ আসে একটি সেক্টর থেকে সেটি হল পামচাষ। আনত্মর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তৈলের চাহিদার ৪০ শতাংশই রপ্তানি করে থাকে মালেশিয়া। মালেশিয়ানরা একটি পাম গাছ থেকে বছরে সর্বনিম্ন ৪,০০০/= থেকে ৫,০০০/= টাকা আয় করে থাকে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে একটি পাম গাছ থেকে বছরে সর্বনিম্ন ৮,০০০/= থেকে ১০,০০০/= টাকা আয় করা সম্ভব। বাংলাদেশে পাম ফলন আসতে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ বছর। এরপর হতে ৬ মাস অনত্মর অনত্মর ফলন দিয়ে যাবে একটানা ৩০ থেকে ৪০ বছর। অতএব, দেশ ও জাতি তথা বেকারত্ব দূরীকরন এবং কৃষকদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য পাম চাষই হবে প্রধান হাতিয়ার।

পামচাষের উপযোগী জায়গা ঃ

পাম গাছের চারা রোপনের জন্য আলাদা জমির দরকার হয়না কারন এই চারা রাসত্মার ধারে, পুকুর পাড়ে, নদীর ধারে, নদীর চরে রোপন করা যায়। এছাড়াও পাহাড়ি অঞ্চলের মাটিতেও পামগাছের চারা রোপন করা যায়। পাম গাছের আরেকটি সুবিধা হলো, এটি বন্যার পানিতে মরে না। পাম চাষের সংগে অন্য ফসলও সাথী ফসল হিসাবে চাষ করা যায়, যেমন - যে কোন ধরনের শাক-সবজি, ষ্ট্রবেরি, পেঁপে, আপেল কুল, বাউকুল। এতে সুবিধা হলো পাম গাছের চারা লাগানোর পর হতে ফল আসা পর্যনত্ম অন্য উৎপাদনের মাধ্যমে বাড়তি আয় করা যায়।

পাম ফলের সাথে অন্যান্য তৈল শষ্যের তুলনামূলক চিত্র ঃ

তৈল শষ্য

পাম

সরিষা/ রেপসিড

সূর্যমুখী

বাদাম

সয়াবিন

তিল

প্রতি হেক্টর জমিতে বছরে তৈল পাওয়া যায়

৭,০০০ কেজি

৫৫৬ কেজি

৫০৪ কেজি

৩৮৪ কেজি

৩৫১ কেজি

১৭৮ কেজি

চারা রোপনের পদ্ধতি ঃ

বাংলাদেশে দুই প্রজাতির পাম চারা পাওয়া যায় এর মধ্যে Datura প্রজাতির পামগাছ সৌন্দর্য বর্ধনের কাজে ব্যবহ্নত হয়। আর Tenare প্রজাতির পাম থেকে মূলত তৈল উৎপাদন করা হয়। সে ক্ষেত্রে কেউ যদি বানিজ্যিক ভাবে পামের চাষ করতে চান, তাহলে অবশ্যই তাকে Tenare প্রজাতির পাম চারা রোপন করতে হবে। পাম চাষ করার জন্য প্রথমেই সুস্থ সবল চারা সংগ্রহ করতে হবে। চারা রোপনের জন্য দুই ফুট গভীর ও দুই ফুট ব্যাসের একটি গর্ত করতে হবে। গর্ত করা পর প্রথমে রাসায়নিক ও কম্পোষ্ট সার ভালোভাবে মিশ্রনের মাধ্যমে গর্তটি প্রস্তুত করতে হবে। এরপর সাত থেকে দশ দিন পর চারা রোপন করতে হবে। চারা রোপনের ৪৫ দিন পর চারার এক ফুট দূরত্বে এক ইঞ্চি পরিমান গোলাকৃতি গর্ত করে ৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। ২০ ফুট দূরত্বে পাম চারা লাগাতে হবে, কেননা একটি পামগাছের ডাল সাত থেকে আট ফুট হয়ে থাকে।

সার প্রয়োগ (চারা লাগানোর আগে) ঃ

১। কম্পোষ্ট

২। টি এস পি

৩। এস ও পি

৪। উইপোকা ধ্বংসকারী ঔষধ

৫-৭ কেজি

১০০ গ্রাম

৫০ গ্রাম

২৫ গ্রাম (বাসুডিন)

পরিচর্যা ঃ

পাম গাছের পরিচর্যা অন্য ফসল বা গাছের তুলনায় খুবই কম করতে হয়। চারা লাগানোর পর মাঝে মধ্যে গোবর সার দেওয়া ভালো। পামগাছ বড় হওয়ার পর কোন প্রকার সার/গোবর প্রয়োগ করতে হয় না কারণ প্রাকৃতিকভাবেই খাবার সংগ্রহ করে। মাঝে মধ্যে গাছের অপ্রয়োজনীয় ডালপালা কেটে দিতে হবে। একে পুলিং বলে।


বাড়িতে পাম অয়েল তৈরীর উপায় ঃ

চারা রোপনের ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে গাছে ফল আসে। একবার ফল আসতে শুরু করলে ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যনত্ম এটি ফল দিয়ে থাকে। পাম গাছে একই সংগে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল থাকে এবং বায়ু ও পোকামাকড় দ্বারা পরাগয়ান ঘটে। প্রতি ৬ মাস পরপর একটি গাছ থেকে ফল পাওয়া যায় অর্থ্যাৎ বছরে ২ বার ফল পাওয়া যায়। পাকা ফল সংগ্রহ করে তা সামান্য পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। এরপর হাত দিয়ে চিপলে রস বের হয়, এই রসের সাথে পানি থাকে। পানি মিশ্রিত রস হাঁড়িতে তাপ দিলে পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যায় এবং তৈল অবশিষ্ট থেকে যায় এরপর সেই তৈল বোতলজাত করে রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়।


পাম তৈলের ব্যবহার ঃ

পাম তৈল সম্পূর্ণরূপে কোলেষ্টেরল মুক্ত হওয়ায় জন্য নিরাপদ। অপরিশোধিত অবস্থায় পাম তৈল এবং অন্য কয়েকটি বহুল ব্যবহার তৈলের কোলেষ্টেরলের মাত্রার তুলনামূলক চিত্র-

তৈল/ফ্যাট

পাম তৈল

সয়াবিন তৈল

সূর্যমূখী তৈল

রেপসিড তৈল

কর্ন তৈল

-

-

-

-

-

কোলেষ্টেরলের পরিমান

১৩-১৯ পি পি এম

২০-৩৫ পি পি এম

৮-৪৪ পি পি এম

২৫-৮০ পি পি এম

১৮-৯৫ পি পি এম

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ষ্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ৫০ পি পি এম (PPM - Parts per Million) পর্যনত্ম কোলেষ্টেরল যুক্ত তৈল কে “কোলেষ্টেরল মুক্ত” ধরা হয় কারণ ওই পরিমান কোলেষ্টেরল আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজন। তাই পাম অয়েল ব্যবহার করলে Heart Disease” কম হয় কেননা এতে কোলেষ্টেরল পরিমান অত্যনত্ম কম। এছাড়াও ব্রেষ্ট ক্যান্সার ও কিডনী রোগসহ অন্যান্য অনেক রোগ হওয়ার আশঙ্খা কমে যায়। হাম বার্গে প্রকাশিত বিশ্ব তৈল বানিজ্য জার্নাল থেকে জানা গেছে ২০০৮ সালে বিশ্বের মোট তৈল ও ফ্যাট উৎপাদনের পরিমান ছিল ১৬০ মিলিয়ন টন, এর মধ্যে ৪৮ মিলিয়ন টন বা ৩০% ছিল পাম ও কার্নেল তৈল আর সয়াবিন তৈল ছিল ৩৭ মিলিয়ন টন, অর্থাৎ ২৩%। পাম তৈলের বিশ্ববানিজ্যে মালেশিয়া জোগান দেয় ৪৫% । আমাদের দেশে পাম চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে তাই আমরা সবাই মিলে দেশ ও দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারি।

ফেলনা যাবে না কিছুই ঃ

অভোগ্য পন্য উৎপাদনের জন্যও কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহ্নত হয় কার্নেল পাম তৈল। এ ধরনের পন্যের মধ্যে আছে

১। সাবান

২। ডিটারজেন্ট পাউডার

৩। সার ফ্যাকট্যান্ট

৪। ফ্যাটি এসিড

৫। ফ্যাটি অ্যালকোহল

৬। গ্লিসারিন

৭। প্রসাধানী সামগ্রী ও ঔষধ

৮। গৃহ ও শিল্পজাত দ্রব্য

৯। ফাইবার বোর্ড ও চিপ বোর্ড

১০। মাছ ও মুরগির খাবার

পামগাছ হলো গুচ্ছ মূল জাতীয় উদ্ভিদ। এর মূল মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে, ফলে পাম গাছ মাটির ক্ষয় রোধ করে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে বন্যা কবলিত এলাকায় পামগাছ লাগালে তা-মাটির ভাঙ্গনরোধে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে বলেছেন, পাম গাছ হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব গাছ কারণ এটি সাধারণ গাছের চেয়ে ১০ গুন বেশি অক্সিজেন ত্যাগ করে।

অন্য রকম ব্যবহার ঃ

পাম তৈল যে শুধু ভোজ্য তৈল হিসাব ব্যবহ্নত হয় না এটি বায়োডিজেল হিসেবেও ব্যবহ্নত হয়, অর্থাৎ “জ্বালানী” হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সাধারন পদ্ধতিতে তৈরী পাম তৈল পেট্রোল ও ডিজেলের সংগে মিশিয়ে বায়োডিজেলের মতো ব্যবহার করা যায়। ১ লিটার ডিজেল দিয়ে যেখানে ১২ অশ্বশক্তির মেশিন চালানো যায় মাত্র ১ ঘন্টা সেখানে ১ লিটার পাম বায়োডিজেল দিয়ে ওই মেশিন চালানো যায় ৩ ঘন্টা। সেচের ক্ষেত্রে পাম বায়োডিজেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

SGL Limited এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঃ

বাংলাদেশের সীমিত আয়ের মানুষদেরকে কিভাবে তাদের আয়ের পরিধি বৃদ্ধি করা যায় এরই লক্ষ্যে একটি সুন্দর আধুনিক পদ্ধতিতে পাম গাছের চারা বাজারজাত করনের পাশাপাশি SGL Limited তার নিজস্ব উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাম ট্রি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি দারিদ্র বিমোচন তথা বেকারত্ব দূরিকরনে SGL Limited তার গুরুদায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। আমাদের স্লোগান হচ্ছে - “পাম ফলের তরল সোনা, বদলে দিবে বাংলাদেশ”। আসুন আমরা সবাই মিলে পামচাষ করি এবং দেশের আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশ উন্নয়নে অগ্রনী ভূমিকা পালন করি।

Source: http://www.sglbd.com/tree.html

No comments:

Post a Comment