Saturday, May 14, 2011

বাগেরহাটের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা হচ্ছে পাম গাছ

পাম চাষে বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনীতি

- দেলোয়ার হোসেন, বাগেরহাট
পাম গাছ চাষে বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র। এর মাধ্যমে দেশের ভোজ্যতেলের বার্ষিক প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন চাহিদা মিটিয়ে মাত্র দশ বছরে ৩ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার তেল রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এছাড়া এ গাছ প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধী হওয়ায় দেশের উপকূলীয় এলাকার মানুষকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায়ও ভূমিকা পালন করতে পারে। স্বল্প খরচে শুধু সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে পাম গাছ চাষের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাম তেল রফতানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্ববাজারে স্থান করে নিতে পারে। একই সঙ্গে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে সারাদেশে এই গাছ লাগিয়ে আগামী ৫-৭ বছরের মধ্যে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগেরহাটে 'বাংলাদেশে পাম তেলের চাষ, পরিবেশ রক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন ও সম্ভাবনা' শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। 'সবুজ গাছের তরল সোনা বদলে দেবে বাংলাদেশ'_ এই স্লোগান নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'গ্রীন বাংলাদেশ'র উদ্যোগে এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাগেরহাট সদর আসনের এমপি অ্যাডভোকেট শওকাত আলী বাদশা।
সেমিনারে পাম চাষ বিশেষজ্ঞ ও গ্রীন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন মোরালী মূল প্রবন্ধে এ সম্ভাবনার কথা উলেল্গখ করে জানান, আমাদের দেশে দৈনিক গড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন এবং বছরে ২১ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর সিংহভাগই আমাদের আমদানি করতে হয় এবং যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। দেশের এ পরিমাণ ভোজ্যতেলের বর্তমান চাহিদা মেটাতে মাত্র তিন কোটি পাম গাছের উৎপাদন প্রয়োজন। কিন্তু যদি পরিবারপ্রতি ৫টি করে পাম গাছ রোপণ করি তাহলে প্রতি বছর আমাদের চাহিদা পূরণ করে ৩ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের পাম তেল রফতানি করা সম্ভব। একজন কৃষক এক বিঘা জমিতে সাধারণ ফসল থেকে সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করে, সেখানে একই পরিমাণ জমিতে পাম চাষ করে বছরে কমপক্ষে ১ লাখ ৬৫ হাজার থেকে ৩ লাখ কিংবা তারও অধিক আয় করা সম্ভব। এছাড়া পরিবেশগত দিক দিয়ে পাম অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব একটি উদ্ভিদ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এটি বাতাসের গতি রোধ করে বাতাসের ক্ষিপ্রতা কমিয়ে দেয়, ফলে লোকালয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়। পাম গাছ দীর্ঘজীবী এবং শক্তিশালী হওয়ায় ঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষ ও সম্পদ রক্ষা করতে উপযোগী, যা আমাদের উপকূলীয় এলাকার মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
সেমিনারে বলা হয়, গত ৩৮ বছর ধরে বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এখানের মাটি ও আবহাওয়া অয়েল পাম চাষের উপযোগী। কোনো কোনো স্থানে মালয়েশিয়ার চেয়েও পামের ভালো ফলন আশা করা যায়। বাগেরহাট সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে বক্তৃতা করেন বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোলল্গা আবদুল হামিদ, বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বাবুল সরদার, এ বি এম মোশারেফ হুসাইন, টিআইবি-সনাক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলী বাবু, পিপি মোহাম্মদ আলী, অধ্যক্ষ সাইফ উদ্দিন আহম্মেদ, ডা. কমলেশ পাল, মোকলেছুর রহমান মনা, ইলিয়াস মাহামুদ প্রমুখ। সেমিনারে জেলার বিভিন্ন আইপিএম ক্লাবের সভাপতি-সম্পাদকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।


Source: Daily Samakal, 14thDec-2009

No comments:

Post a Comment